এবার শীতের কুয়াশা পায়নি রাজশাহীর আমের মুকুল। ফলে মুকুলের ভারে নুয়ে পড়েছে এ জেলার আমগাছগুলো। কোথাও কোথাও গুটি বাঁধতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে রঙিন স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে আমচাষী ও বাগান মালিকদের মনে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এবার আম উৎপাদন হবে ভালো। গতবারের তুলনায় এবার ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে গুটি আসতে শুরু করেছে। তবে আম পাকবে রোজার পর। ফলে এবার আমের ভালো দাম পাবেন চাষীরা।
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলা নিয়ে রাজশাহী কৃষি অঞ্চল। চলতি মৌসুমে এ চার জেলাজুড়ে আমবাগান রয়েছে ৮৪ হাজার ৩৮৮ হেক্টর। এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ১৭ হাজার ১২৮ টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৪ হাজার ৭৩৮ হেক্টরে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১৮, নওগাঁর ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টরে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৫ ও নাটোরের ৫ হাজার ৮৫৭ হেক্টরে জমিতে ৮২ হাজার ৩৯৩ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় মোট আমবাগান ছিল ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর। ওই মৌসুমে আম উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪০ দশমিক ৫৩ টন। ওই মৌসুমে আম বাণিজ্য হয় প্রায় ৭১ কোটি ৮১ লাখ ৬২ হাজার টাকার।
অন্যদিকে ২০২০-২১ মৌসুমে আমবাগান ছিল ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর। সেবার মোট উৎপাদন হয় ২ লাখ ১৭ হাজার ১২৮ টন। প্রায় ৮৬ কোটি ৮৫ লাখ ১২ হাজার টাকার আম বিক্রি হয়েছে ওই মৌসুমে।
জেলার চারঘাটের আমচাষী মজিদুল হক জানিয়েছেন, এখন সব গাছেই মুকুল। আর কয়েকদিনের মধ্যেই সরিষা দানার মতো হয়ে উঠবে। এখন সেভাবে বাগান পরিচর্যা নেই। আম গুটি হতে শুরু হলেই পুরোদমে পরিচর্যা শুরু হবে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ভালো ফলনের আশা করা যাচ্ছে।
বাঘা উপজেলার আমোদপুর গ্রামের আমচাষী আব্দুল বারী বলেন, গত বছর করোনার কারণে ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়েছে। অর্থনৈতিক স্থবিরতা, করোনার বিধিনিষেধসহ নানা কারণে ভালো দাম পাননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতবার লাভ দূরে থাক, পুঁজিই উঠে আসেনি। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। আমের মুকুলে ভরে উঠেছে অধিকাংশ গাছ। এবার আবহাওয়াও ভালো রয়েছে। তাই ভালো বাজারমূল্য পাওয়ার আশা করছি।
আশার পাশাপাশি অনেকের মনে আছে শঙ্কাও। নাটোরের আমচাষী রহিম মিয়া বলেন, আমের মুকুল ভালো হলেই হয় না, প্রকৃতি যদি সহায় না হয়। কারণ শিলাবৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিলে একদিনেই সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে আমচাষীদের। তবে অন্যান্যবারের তুলনায় এবার আমের ফলন নিয়ে আশাবাদী।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে আমের জন্য আবহাওয়া বেশ অনুকূলে রয়েছে। অন্যান্যবার কুয়াশায় মুকুলের কিছুটা ক্ষতি হলেও এবার সেটি নেই। আবার গত বর্ষা মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় মাটি পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। আবার অনেক কৃষক আমবাগানে সাথি ফসল চাষ করেছেন। এতে গাছ পর্যাপ্ত পুষ্টি পেয়েছে। এসব কারণে এবার মুকুলও বেশি দেখা যাচ্ছে, যা থেকে বাম্পার ফলনের আশা করা যাচ্ছে।
এ গবেষক বলেন, গত কয়েক মৌসুমে রোজায় আম পাকছে। ফলে ক্রেতা সংকট থেকেছে। কিন্তু এবার আম পাকবে রোজার পর। তাছাড়া করোনা সংকটও প্রায় কেটে গেছে। ফলে সব মিলিয়ে এবার আমচাষীরা লাভের আশা করতেই পারেন।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্র সূত্র জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আম আবাদ হয়েছে, ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার টন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৮৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গত বছর ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে আম আবাদ হয়েছিল। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন হয়েছিল ১১ দশমিক ৯৬ টন। মোট উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪০ দশমিক ৫৩ টন আম, যার বিক্রয়মূল্য ছিল প্রায় ৭১ কোটি ৮১ লাখ ৬২ হাজার ১২০ টাকা।