এ ছাড়া এর মাধ্যমে রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে লাভজনক উৎসের একটিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ইইউ হলো রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেলের বাজার। রাশিয়া যে জ্বালানি তেল রপ্তানি করে তার অর্ধেকের ক্রেতা ইউরোপের দেশগুলো।
তবে ইইউর এ নিষেধাজ্ঞা ক্রেমলিনকে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত করবে বলা হলেও এ নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। কারণ, শুরুতে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে শুধু সমুদ্রপথে ট্যাংকারের মাধ্যমে যে তেল সরবরাহ হয়, তার ক্ষেত্রে। পাইপলাইন দিয়ে সরবরাহকৃত তেল নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না।
এর কারণ অন্য ইইউ দেশগুলোর চেয়ে রাশিয়ার প্রতি দরদ বেশি থাকা হাঙ্গেরিকে ছাড় দেওয়া। সোভিয়েত আমলে নির্মিত দ্রুজবা (রুশ ভাষায় অর্থ বন্ধুত্ব) পাইপলাইন দিয়ে রাশিয়া থেকে হাঙ্গেরিতে তেল সরবরাহ করা হয়। রাশিয়ার তেলের ওপর হাঙ্গেরি অনেক বেশি নির্ভরশীল। হাঙ্গেরির মোট চাহিদার প্রায় ৬৫ শতাংশ তেল আসে রাশিয়া থেকে।
রাশিয়া থেকে সমুদ্রপথে সমপরিমাণ তেল আমদানি করে ইইউ। কিন্তু ইইউর নিষেধাজ্ঞা বাজারে ততটা প্রভাব ফেলবে না। ইতিমধ্যে পশ্চিমে অনেক ট্যাংকার ‘স্বেচ্ছা নিষেধাজ্ঞায়’ পড়েছে। কারণ বন্দরকর্মীরা রাশিয়ার কার্গো বহনকারী জাহাজ থেকে মাল খালাস করতে চাচ্ছেন না। প্রধান তেল কোম্পানিগুলো রাশিয়ার তেলের চালান নিয়ে সুনাম নষ্ট হওয়ার ভয়ে চিন্তিত। পশ্চিমা কোম্পানিগুলো বীমা চুক্তি করতে চাচ্ছে না। রাশিয়ার মিত্র দেশের বীমা কোম্পানিগুলো অংশত তাদের জায়গা নিতে পারলেও তাদের কাছে এত অর্থ নেই।
ফলে এখন এই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে যে নিষেধাজ্ঞা একবার কার্যকর হয়ে গেলে সমুদ্রপথে রাশিয়ার তেল কি অবিক্রিত থেকে যাবে। তবে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত রাশিয়ার তেল রপ্তানি বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগানের বিশ্লেষকদের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার তেল রপ্তানি যে বেড়েছে এর বেশির ভাগ গেছে ভারতে। ভারত রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি।
আরেকটি প্রশ্ন হলো ইউরোপ শেষ পর্যন্ত পাইপলাইনে রাশিয়ার তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেবে কি না। কারণ অন্য দেশ থেকে এই ঘাটতি পূরণ করা বেশ কঠিনই। পোল্যান্ড ও জার্মানি বলেছে, তারা দ্রুজবা পাইপলাইনে তেল আমদানি বন্ধ করবে। তবে হাঙ্গেরি বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করা বাদ দিয়েছে এমন ভাবাটা কঠিন। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান এ সিদ্ধান্ত আটকে দেবেন বলেছেন।
আংশিক হলেও সম্ভবত ইইউর এ নিষেধাজ্ঞায় জ্বালানি বাজারে একটা টানাটানি শুরু হয়েছে। এতে করে তেলের দাম আবার বাড়ছে। এদিকে মহামারির প্রকোপ শেষ হয়েছে। মানুষজন আবার গাড়ি চালাচ্ছেন ও উড়োজাহাজে যাতায়াত করছেন। এতে জ্বালানির চাহিদাও অনেক বেশি। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে চীন করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার কারণেও জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে অবশ্য তেলের উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে তেল রপ্তানিকারকদের সংগঠন ওপেক ও তাদের সহযোগী রাশিয়া। ২ জুন ওপেকের বৈঠক হয়েছে। সেখান থেকে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এসেছে। করোনা মহামারির প্রকোপের কারণে বিশ্ব যখন মন্দার খাদে, তখন তেলের চাহিদা ছিল কম। ক্ষতি কাটাতে উৎপাদন কমায় ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উৎপাদন বাড়ানো হয়নি। তবে তেলের উৎপাদন ধীরে ধীরে বাড়বে বলে জানিয়েছে ওপেক।