বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ছাত্রলীগের নতুন কমিটির শ্রদ্ধা


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

সোমবার সকালে ধানম‌ণ্ডি-৩২ নম্ব‌রে বঙ্গবন্ধুর প্র‌তিকৃ‌তি‌তে ফুল দি‌য়ে শ্রদ্ধা জা‌নান তারা। এর মধ্যদিয়ে নতুন কমিটি আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের যাত্রা শুরু করলো।

সবার প্রত্যাশা অনুযায়ী দল পরিচালনা, দলের সমন্বয় সাধন,ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দলকে গুছিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করাই তাদের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ।

আগামী ১০ মাসের রোডম্যাপ তৈরি ও তার বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য একনিষ্ঠতা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে সংগঠনে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে তাদের।

এদিকে, সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে এসব চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার পরামর্শ দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, শোভন-রাব্বানীর ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সংগঠন পরিচালনা করাই হবে জয়-লেখকের প্রধান কাজ।

এর আগে গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সামনে আসেন জয়-লেখক। এ সময় তারা বলেন, পুষ্পস্তবক অর্পণের পর ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে আমাদের কর্মপরিকল্পনা নির্দিষ্ট করব।

গত শনিবার ধারাবাহিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, অভিযোগ ও সমালানোচনার মুখে ছাত্রলীগের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয় সাবেক দুই শীর্ষ নেতা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে।

একই সঙ্গে সংগঠনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আল-নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পরবর্তী সম্মেলন পর্যন্ত তারা কমিটি গঠন থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের সব ধরনের কর্মসূচি পরিচালনা করবেন।

এই কমিটিকে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নানা ধরনের মন্তব্যের পাশাপাশি পরামর্শও দিয়েছেন। তাদের মতের ভিত্তিতেই উঠে এসেছে যে, প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা অনুযায়ী সংগঠন গোছাতে নতুন দুই নেতাকে প্রধানত আটটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে এই সময়ের মধ্যে সংগঠন গোছাতে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এসবের মধ্যে রয়েছে- কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে পদবঞ্চিতদের পদায়ন এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন।

সাংগঠনিক জেলাগুলোতে নতুন কমিটি দিতে হবে। চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজ ও অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ মনোভাব দেখাতে হবে। সংগঠনে পর্যাপ্ত সময় দেয়ার পাশাপাশি সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনায় মনোযোগী হতে হবে। সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে নেতৃত্ব দিতে হবে।

এ ছাড়া স্বল্পসময়ে অধিক কাজ সম্পন্ন করার মানসিকতা নিয়ে ১০ মাসের রোডম্যাপ তৈরি ও তার বাস্তবায়ন করতে হবে। আর মোটা দাগে বললে- শোভন-রাব্বানীর করে যাওয়া ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সংগঠন পরিচালনা করাই জয়-লেখকের প্রধান কাজ হবে বলে মনে করছেন তারা।

এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং অযোগ্যতার কারণে গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেই সভায় তিনি শোভন-রাব্বানীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর আ’লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে অব্যহতি দেয়া হয়।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিবাহিত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, চাকরিজীবীসহ বির্তকিতদের পদ দেওয়া, ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করা, কমিটি দিতে অর্থনৈতিক লেনদেনসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে এই দুজনের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেরিতে যাওয়া এমনকি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের পরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সম্মেলনের আড়াই মাস পর গত বছরের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছর মেয়াদী আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর পর দীর্ঘ প্রায় এক বছর পর গত ১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *