টাকার বিনিময়ে মিলছে টিকা, তদন্তে নামছেন গোয়েন্দারা

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়ে অসাধু চক্রের তৎপরতা শুরু হয়েছে।তারা টাকার বিনিময়ে মানুষকে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।ওই চক্রের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা হয় সরকারি টিকা কেন্দ্রের কর্মী অথবা টিকা কেন্দ্রের কর্মীদের সঙ্গে যোগসাজসে এই কাজ করছে।গত কয়েক দিনে টাকার বিনিময়ে টিকার দেয়ার বেশ কিছু তথ্য প্রকাশের পর গোয়েন্দারা তদন্তেনেমেছেন।ইতোমধ্যে টিকার অসাধু নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত কিছু সদস্যের তথ্যও তারা জানতে পেরেছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের কাছে টিকা নিয়ে অসাধু চক্র সক্রিয় থাকার তথ্য এসেছে।গোয়েন্দারা ইতোমধ্যে তাদের ধরতে তৎপরতা শুরু করেছে।

বাংলাদেশে টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে ধীরগতি শুরু থেকেই।এ পর্যন্ত মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ পূর্ণ ডোজ টিকার আওতায় এসেছে।টিকার মজুদ কম থাকায় গণটিকাদান কর্মসূচি আর না চালানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে।এ অবস্থায় টিকা নিতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।টিকা গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করে অপেক্ষায় আছেন কবে ডাক আসবে।সরকার নির্ধারিত সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করলেও নির্ধারিত টিকা কেন্দ্র থেকে মোবাইলে বার্তা পাঠানো হয় টিকা গ্রহণের জন্য।

দীর্ঘ অপেক্ষার পরও এসএমএস না পাওয়ায় অনেকে এসএমএস ছাড়াই টিকা কেন্দ্রে যাচ্ছেন।কেন্দ্রে গেলেও তারা টিকা পাচ্ছেন না।এমন মানুষদের ঘিরেই টিকাকেন্দ্রগুলোতে গড়ে উঠেছে অসাধু চক্র।তারা টাকার বিনিময়ে মানুষকে টিকা নিতে প্রলুব্ধ করছে।অভিযোগ পাওয়া গেছে, টিকা কেন্দ্রের দায়িত্বরতদের সঙ্গে যোগসাজশে এই চক্রের লোকজন মানুষকে দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।

গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে এ ধরণের চক্র সক্রিয় বলে তথ্য এসেছে।

মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি চক্র টিকার এসএমএস পাঠানোর জন্য প্রতিজনের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে।দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও যারা টিকা গ্রহণের এসএমএস পাননি তাদের অল্প সময়ের মধ্যে এসএমএস দেয়া হচ্ছে টিকা গ্রহণের।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এর একটি টিকা কেন্দ্রের বাইরেও এমন অসাধু চক্রের সদস্যদের দেখা গেছে। যারা টিকার এসএমএস পাননি তাদের দেড় থেকে দুই হাজার টাকার বিনিময়ে তা পাইয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। তাদের মাধ্যমে কেউ কেউ এই সুবিধা নিয়েছেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, এ ধরনের কাজের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে টিকা নিতে আসা মানুষদেরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

টাকার বিনিময়ে টিকা দেয়ার কারণে টিকা নিতে আগ্রহীদের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি হবে এবং তা টিকাদান কর্মসূচিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোস্তাক হোসেন।বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর’র এর সাবেকই এই প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, টিকা কেন্দ্রে কেউ যাতে অর্থের বিনিময়ে টিকা নিতেএবং দিতে না পারে তার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।টাকার বিনিময়ে টিকা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলে অনেক সাধারণ মানুষ টিকা থেকে বঞ্চিত হতে পারে।

গত ১৮ই আগস্ট রাতে রাজধানীর উত্তরখানে টিকাসহ একজন পল্লী চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।ওই সময় তার মালিকানাধীন ক্লিনিক থেকে মডার্নার ২৯ ডোজ টিকা এবং দুই হাজার ডোজের খালি বাক্স উদ্ধার করা হয়।গণটিকাদান কর্মসূচি চলার সময় ওই পল্লী চিকিৎসক কৌশলে ওই টিকা সরিয়ে পরে তার ক্লিনিকে টাকার মাধ্যমে দিচ্ছিলেন।গ্রেপ্তার ওই ব্যক্তিকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি কিভাবে টিকা পেয়েছেন তার তদন্ত করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *